বেলুড় মঠে স্বামীজির প্রথম দুর্গাপুজো: সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
SANJIBANI SUDHA SANJIBANI SUDHA
6.27K subscribers
1,314 views
59

 Published On Oct 20, 2023

বেলুড় মঠে স্বামীজির প্রথম দুর্গাপুজো: সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী দুর্গা হয়ে এলেন স্বামীজির বেলুড় মঠে।
বেলুড় মঠের প্রথম দুর্গাপূজার একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে স্বামীজির গৃহী শিষ্য শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী লেখেন, ‘ মহা সমারোহি দিনত্রয়ব্যাপী মহোৎসব কল্লোলে মঠ মুখরিত হইল। নহবতের সুললিত তানতরঙ্গ গঙ্গার পরপারে প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। ‘দীয়তাং নীয়তাং ভুজ্যতাম’— কথা ব্যতীত মঠস্থ সন্ন্যাসীদের মুখে এ তিন দিন আর কোন কথা শুনিতে পাওগা যায় নাই। যে পূজায় সাক্ষাৎ শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরানি উপস্থিত, যাহা স্বামীজির সঙ্কল্পিত, দেহধারী দেবসদৃশ মহাপুরুষগণ যাহার কার্যসম্পাদক, সে পূজা যে অচ্ছিদ্র হইবে তাহাতে আর বৈচিত্রচিত্র্য কি? দিনত্রয়ব্যাপী পূজা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হইল। গরীব দুঃখীর ভোজন-তৃপ্তিসূচক কলরবে মঠ তিনদিন পরিপূর্ণ হইল।’
শরচ্চন্দ্র চক্রবর্তী আরও লিখছেন,‘গরিব-দুঃখী- কাঙাল দরিদ্রদিগকে দেহধারী ঈশ্বরজ্ঞানে পরিতোষপূর্বক ভোজন করান এই পূজার প্রধান অঙ্গরূপে পরিগণিত হইয়াছিল। এতদ্ব্যতীত বেলুড়, বালি উত্তরপাড়ার পরিচিত অপরিচিত অনেক ব্রাহ্মণপণ্ডিতকেও নিমন্ত্রণ করা হইয়াছিল এবং তাঁহারও সকলে আনন্দে যোগদান করিয়াছিলেন। তদবধি মঠের প্রতি তাঁহাদের পূর্ববিদ্বেষ বিদূরিত হইয়া ধারণা জন্মে যে, মঠের সন্ন্যাসীরা যথার্থ হিন্দুসন্ন্যাসী।’
‘বেলুড় মঠে স্বামীজীর দুর্গাপূজা’ গ্রন্থে স্বামী দেবেন্দ্রানন্দজি জনৈক সন্ন্যাসীর সেই অদ্ভুত স্বপ্নদৃশ্যের অসাধারণ বর্ণনা তুলে ধরেছেন— স্বামীজি যখন বেলুড় মঠে দুর্গাপূজা করার বিষয় চিন্তা করছিলেন, সেই সময় তাঁর জনৈক সন্ন্যাসী ভ্রাতার একটি অলৌকিক স্বপ্ন-দর্শনও হয়েছিল। তিনি দেখেন যে সাক্ষাৎ মা দশভূজা দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে গঙ্গার ওপর দিয়ে বেলুড় মঠের দিকে আসছেন। গুরুভ্রাতার মুখে এই স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনে স্বামীজি আরো উ্যসাহিত হয়ে উঠেছিলেন, বলেছিলেন, ‘যেরূপে হোক, এবার মঠে পুজো করতেই হবে। তখন শারদীয়া পুজোর আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি।’
স্বামী দেবেন্দ্রানন্দজি আরও লিখছেন,‘স্বামীজি যথাবিধি দুর্গপুজো করার জন্য স্মৃতিকার রঘুনন্দনের একখানি ‘অষ্টবিংশতি- তত্ত্ব’ও সংগ্রহ করেন। পুস্তকটি আদ্যোপান্ত পাঠ করে স্বামীজি বললেন, ‘রঘুনন্দন বলেছেন, ‘নবম্যাৎ পূজয়েৎ দেবীং কৃত্বা রুধিরকর্দমম্’— ‘মার ইচ্ছ হয় তো তাও করব।’ এই প্রসঙ্গে আর একবার বলেছিলেন, ‘মাকে বুকের রক্ত দিয়ে পুজো করতে হয়, তবে তিনি প্রসন্না হন। মার ছেলে বীর হবে, মহাবীর হবে। নিরানন্দে, দুঃখে প্রলয়ে মহালয়ে মায়ের ছেলে নির্ভীক হয়ে থাকবে।’
স্বামী দেবেন্দ্রানন্দজি লিখছেন,‘বেলুড় মঠের শারদীয়া দুর্গাপূজার ঐতিহ্যগত তাৎপর্য হল ১৯০১ সালে স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দের দ্বারাই এই পূজা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় এবং পরমারাধ্যা শ্রীশ্রীমাসারদাদেবীও এই পূজার সময় বেলুড় মঠে উপস্থিত ছিলেন স্বামীজিরই ইচ্ছানুসারে। শ্রীশ্রীমায়ের নামেই এই পূজার ‘সঙ্কল্প’ করা হয় (এবং আজও সেই ধারাই চলে আসছে)। আসলে সন্ন্যাসীগণ ‘সঙ্কল্প’ করে কোন পূজা বা বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ড করার অধিকারী নন বলেই আদর্শ গৃহস্থাশ্রমী শ্রীশ্রীমার (যদিই ত্যাগ- তপস্যায় তিনি সন্ন্যাসীরও শিরোমণি) নামেই বেলুড় মঠের দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টি খুবই অভিনব এই কারণে যে, শ্রীশ্রীমায়ের দেহত্যাগের এৎ বছর পরেও সেই একই ধারায় বেলুড় মঠের পুজো অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। অথবা স্বামীজি যে কল্পনা করতেনব শ্রীশ্রীমাকে ‘জ্যান্ত দুর্গারূপে’, প্রতি বছর মৃন্ময়ী মূর্তিতে কী সেই চিন্ময়ী মায়ের অধিষ্ঠান হয়? ’
জয় মা দুর্গা,জয় ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণদেব, জয় মা সারদাদেবী, জয় স্বামী বিবেকানন্দ মহারাজজির জয়।
চ্যানেলের নাম: সঞ্জীবনী সুধা।সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত ও আশীর্বাদ ধন্য এই চ্যানেল।‘Sanjibani Sudha’,
Apurba Chatterjee, [email protected] , facebook.com/apurba.chatterjee.313?mibextid=ZbWKwL,@apurba1964।
★Subscribe to us: sanjibani sudha

show more

Share/Embed