Published On Oct 29, 2021
#FikkalayGaon #Kalimpong #OffbeatDestination #Kapchakay'sFarmStay #delo
#darjiling #weekendTour #weekendtourFromKolkata #bangla #bengali
এই যে কদিন আগে কি ভয়ংকর বৃষ্টিটাই না শুরু হয়েছিল, সেসময় আমি আমার ফুল ফ্যামিলি সমেত ইচ্ছেগাওতে বিরস মুখে বসে আছি।
জানি জানি জানি, ওয়েদার ফোরকাস্ট ছিল, সতর্কতা ছিল, সব ছিল, কিন্তু ঐ যে একটা টুর ক্যান্সেল করে এটা ঠিক করেছিলাম, ফলে এটাও ক্যান্সেল করলে খুব কষ্ট পেতাম।
এনিওয়ে, তার থেকেও বেশী কষ্ট পাচ্ছিলাম, গোটা একদিন স্রেফ হোম স্টেতে ব্যাজার মুখে বৃষ্টি দেখে কাটিয়েছি, কাঞ্চনজঙঘা তো দূর কি বাত, বৃষ্টিতে হোমস্টের কাঞ্চন শেরপাকেও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছেনা।
বসে বসে সারাদিন যে মোবাইল ঘাঁটবো, তারও উপায় নাই, ব্যাটারী মাইনাসে রান করছে, পাওয়ার ব্যাংক লজ্জা মুখ ঢেকেছে আর কারেন্ট তো স্বাভাবিকভাবেই বেপাত্তা। হোমস্টের লোকেদের বলতে, হাসিমুখে তাঁরা সহমর্মীতা জানাচ্ছেন যে , তাঁদের ফোনগুলোও তো ডেড!
টানা একদিন মোমবাতি জ্বালিয়ে হাগু করতে যেতে যেতে পরেশান হয়ে গেলাম। কিন্তু কিছু করার নেই, পরের দিন সকালেও সমানতালে বৃষ্টি। আরো সুসংবাদ , আমাদের নেক্সট ডেস্টিনেশান চারখোলের রাস্তা বন্ধ ।
এখন কি উপায়? আমার ট্রাভেল এজেন্ট কাম বন্ধু ট্রাভেলিয়ানার সৌরভ ফোনে জানাল দুটি উপায় হয় আমাকে এদিন এখানেই থেকে যেতে হবে নয়ত কালিম্পং-এ নেমে যেতে হবে।
করুন মুখে পাহাড়দেবতার দিকে তাকালাম, ‘হ্যাঁগো তোমার কি মন নাই কুসুম,থুড়ি পাহাড়’!
বেলা একটু বাড়তে হঠাৎ দেখলাম বৃষ্টি একদম গো গোয়া গন, সাথে সাথেই সৌরভের ফোন,’একটা নতুন জায়গায় যাবে নাকি ভরসা করে? তোমাদেরই প্রথম পাঠাচ্ছি!
ব্যাস, ব্যাগেজ উঠাও আর ভাগো, মোমবাতির আলো ঐ দেওয়ালির দিনই ভালো, আর নিতে পারছি না।
ডিরেকশান বলতে , কালিম্পং থেকে আধ ঘন্টাখানেক (১০ কিমি), ডেলো থেকে ৩/৪ কিমি হবে, গাড়ি চেপে পৌঁছে গেলাম আমাদের পরিবর্তিত ডেস্টিনেশান আলো ঝলমলে সবুজের বাসভূমি “ফিকলে গাঁও” (Fikkalay Gaon)।
কেপচাকে ফার্মস্টে-তে( Kapchakay’s Farmstay) ঢুকতেই চমক……
কেমন আছেন, আসতে অসুবিধে হয়নি তো? ঝরঝরে বাংলা!
দেখলাম এক স্থানীয় যুবক, এক গাল হাসি নিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন।
আপনি বাংলা বলতে পারেন?
আরে আমিতো কোলকাতাতেই পড়াশোনা করেছি তো।
ব্যাস, কাঞ্চনজঙঘার দোরগোড়ায় ঝরঝরে বাংলা?
সেই শুরু, তারপরে বাকীটা গড়গড়িয়ে চলতে থাকল। ভদ্রলোকের নাম পুষ্কর থাপা, ওনার স্ত্রী স্নেহলতা থাপা, আলাপ হলো। দুটো বাম্বু কটেজ, একটা কেবিন হাউস, ওনাদের নিজেদের বাড়ী , আর চারপাশে পাহাড়ের ধাপে ধাপে বিভিন্ন শাকসব্জীর ছোট ছোট খেত, পোলট্রী ফার্ম ,নার্সারী, সব কিছুই নিজেদের হাতে গড়া সব কিছুই অর্গানিক।
কথায় কথায় জানতে পারলাম, ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা দুজনেই রীতিমতো উচ্চশিক্ষিত আর সরকারী উচ্চপদে আছেন, ফার্মটা ওনাদের মায়ের এবং লোক দেখাশোনা করে, কিন্তু সেদিন কি একটা পরব উপলক্ষে কাজের লোকটিকে ছুটি দিয়েছেন বলে ওনারাই আমাদের আপ্যায়ণ করছেন।
ঐ মাপের মানুষদের ওরকম অতিথি আপ্যায়ণ দেখে সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম, এতো আন্তরিকতা আমি অন্তত কোনও হোমস্টেতে পাইনি।
যাইহোক গরম জলে ব্যাবস্থা হলো, পুষ্করদা, নিজের গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আমাদের মৃত মোবাইলে অক্সিজেন দিলেন, তারপরে আমাদের নিয়ে গোটা ফার্মটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন।
দুপুরে খাওয়া দাওয়াটাও জম জমাট হলো, স্কোয়াসের তরকারী স্কোয়াস থেকে শুরু করে মুরগীর মাংস বা ডিম সবটাই ফার্মের ছিল।
একটু রেস্ট নিয়ে, পুষ্করদাই স্থানীয় কিছু বাচ্চাদের দায়িত্ব দিলেন আমাদের এক ভিউ পয়েন্ট দেখিয়ে আনার, আঁকা বাঁকা পাথুরে পথ , শীর্ণ প্রান্তর, বন জঙ্গল পেরিয়ে সেই ভিউ পয়েন্টে পৌছানো রীতিমতো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা ছিল।
যাই হোক, সন্ধ্যে পড়তে দেশী চিকেনের বার্বিকিউর আয়োজন হলো, ঠান্ডা ঠান্ডা উন্মুক্ত প্রান্তরে গরমা গরম চিকেন ,যাকে বলে ডিলা গ্র্যান্ডী মেফিস্টোফেলিস কম্বিনেশান।
সেই জমজমাট সন্ধ্যে আরো জমে উঠলো থাপা দম্পতির উষ্ণ সান্নিধ্যে, কলেজের প্রেম থেকে শুরু করে পাহাড়েও পাশবুক ছাপানোর বিরক্তি (ঘটনাচক্রে বেরলো পুষ্করদা আমারই পেশার, এক ব্যাংক আধিকারিক :p ) কি না আসেনি, গল্পে গল্পে রাত যে কখন পেরিয়ে গেছে খেয়াল করিনি। যাইহোক, পরের দিন যেহেতু আমাদেরও বেরনো ছিল, আর ওনাদেরও অফিস, তাই সেদিনের মতো গপ্পে বিরতি টানতে বাধ্য হলাম।
আসল চমকটা ছিল, পরের দিন ভোরবেলা, ঘরের জানলা দিয়ে আলো আসতেই দেখলাম, দূরে আলো ঝলমলে তুষার শুভ্র কাঞ্চনজংঘা সগর্বে বিরাজমান। ঝটপট উঠে পড়লাম , বারান্দায় গিয়ে এই বিশালের ব্যাপ্তি অনুভব করতে লাগলাম নিজের অন্তরে। এর মধ্যেই পুষ্করদার চা নিয়ে এসে গেল…… চায়ে পে কাঞ্চন। এবার শেষের পালা, মনটা সত্যিই খারাপ লাগছিল, একদিনের মধ্যে এই ফিকলে গাঁও, কেপচাকে ফার্মস্টে, থাপা দম্পতি, এখানকার পলিউশান ফ্রী বাতাস, পলিউশান ফ্রী মানুষের ব্যাবহার, বড্ড ভালো লেগে গেছিল, বড্ড আপন করে নিয়েছিলেন তাঁরা।
কিন্তু সমতলের মানুষকে তো ফিরতে হয়ই, তাই ফিরে চললাম।
ও হ্যাঁ, যাওয়ার সময়, আমার বাবা খুব ঝাল লংকা খেতে ভালোবাসে বলে এক গোছা লংকা, আর আমি ইন্ডোর প্ল্যান্ট ভালোবাসি বলে ৪টে গাছ খুব যত্নে প্যাক করে দিয়ে দিয়েছে, দাম দিতে গেলে জিভ কেটে জানিয়েছে, ভালোবাসার কি দাম হয়?
আমাদের পুরো জার্নিটা এই ব্লগে তুলে ধরলাম, নিজেরাই দেখে মিলিয়ে নিন ,মিথ্যে কিছু বলেছি কিনা :)
কিভাবে যাবেন:
কালিম্পং থেকে যেতে পারেন গাড়িতে, ডেলো থেকেও বেশ কাছে হয়।
খরচ : আমাদের একদিনের জন্য জন প্রতি লেগেছিল ১২০০ টাকা করে(ব্রেক ফাস্ট লাঞ্চ ডিনার আর চা ), চিকেন বার্বিকিউ এক কিলো ৫০০টাকা।
যোগাযোগ: Kapchakay’s Farmstay 9339956806
Sourav 8017633239
Music Used in this Video
1: • Video
2: • Documentary Inspirational (Soft backg...