অনন্য অরুন্ধতীঃ জন্মশতবর্ষে ফিরে দেখা - জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য (১৯২৪ - ১৯৯০), Arundhati Devi
Banglalive.com Banglalive.com
8.59K subscribers
157 views
8

 Published On Apr 28, 2024

শান্তিনিকেতনে মাত্র বারো বছর বয়সে তাঁর গাওয়া গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ! নাচ, গানের পাশাপাশি ছবি আঁকার হাতও ছিল চমৎকার। এক সময় ঠিক করেছিলেন পেশাদার আঁকিয়েই হবেন। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে শেষমেশ এসে পড়লেন চলচ্চিত্র জগতে! ১৯৫২ সালে নিউ থিয়েটার্সের ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ ছবির মাধ্যমে পথচলার সূচনা। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন কার্তিক চট্টোপাধ্যায় এবং নায়কের চরিত্রে ছিলেন বসন্ত চৌধুরি। দুই নবাগত শিল্পীকে নিয়ে করা এই ছবির বাংলা এবং হিন্দি দু’টি সংস্করণই দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। চলচ্চিত্রে প্রথমবার অভিনয় করেই দর্শকদের মনে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন ছবির নায়িকা অরুন্ধতী দেবী। অভিনয়ের মতোই ভবিষ্যতে ছবি পরিচালনা, সুরারোপ থেকে চিত্রনাট্য – সমস্ত ক্ষেত্রেই তিনি আজও স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল।
অরুন্ধতী দেবীর জন্ম ১৯২৪ সালের ২৯ এপ্রিল, অবিভক্ত বাংলার ঢাকায়। তাঁর বাবা বিভুচরণ গুহঠাকুরতা ছিলেন উদারমনস্ক, দার্শনিক স্বভাবের মানুষ। ছেলেবেলা থেকেই এক মুক্ত সাংগীতিক পরিবেশে তাঁর বড় হয়ে ওঠা। মাত্র ছ’বছর বয়সে ‘ডাকঘর’ নাটকে ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ গানটি গেয়ে সকলের থেকে প্রভূত প্রশংসা পান ছোট্ট অরুন্ধতী, সঙ্গে পান মেডেলও। প্রবল উৎসাহে ঢাকায় থাকতেই গান শেখা শুরু করেন। কলকাতায় এসে কিছুদিন হিমাংশু দত্তের কাছে তালিম নেওয়ার পর তাঁর পিসি ও পিসেমশাই তাঁকে নিয়ে যান শান্তিনিকেতনে। শৈলজারঞ্জন মজুমদারের সান্নিধ্যে সেখানে নতুন করে শুরু হয় গান শেখা। কয়েক বছরের মধ্যেই প্রায় ছ’শো গান তুলে ফেলেছিলেন অরুন্ধতী! পাশাপাশি গুরু ব্রজবাসী ও বালকৃষ্ণ মেননের কাছে চলেছিল নাচের তালিমও। বিশ্বভারতীর পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন অরুন্ধতী আর দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৪০ সাল নাগাদ অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়ার আমন্ত্রণ পান তিনি। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুচিত্রা মিত্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের সঙ্গে শুরু হয় তাঁর রেডিয়োয় গান গাওয়া। অনশন ভঙ্গ উপলক্ষে মহাত্মা গান্ধীকেও গান শোনানোর সৌভাগ্য হয়েছিল অরুন্ধতীর। পাঁচের দশকে চিত্রনাট্যকার বিনয় চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ‘নিউ থিয়েটার্সে’-র ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ এবং ‘যাত্রিক’, ছবি দু’টিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। তাঁর জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে সাংবাদিক রবি বসু লিখছেন, “নিউ থিয়েটার্সের ‘মহাপ্রস্থানের পথে’ ছবিটা নিয়ে তখন বাজারে ভীষণ হইচই। তার চেয়েও বেশি হইচই ওই ছবির নতুন নায়িকা অরুন্ধতী মুখার্জীকে নিয়ে। ওরকম সুন্দরী নায়িকা তখনকার দিনে আর কেউ ছিলেন কিনা সন্দেহ। তার ওপর দুর্দান্ত অভিনয়-প্রতিভা। সব মিলিয়ে দর্শকের কাছে অরুন্ধতী দেবীর আকর্ষণ ছিল ভয়ানক।”
দু’বছর পর ১৯৫৪ সালে পর মুক্তি পায় দ্বিতীয় ছবি ‘নদ ও নদী’ এবং ওই বছরেরই শেষে মুক্তি পায় ‘বকুল’। এই ‘বকুল’ ছবিতে অরুন্ধতী দেবীর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন উত্তমকুমার। ছবিতে অরুন্ধতীর অভিনয় আর ক্যারিশমায় চাপা পড়ে গিয়েছিলেন স্বয়ং মহানায়কও। পরে উত্তমকুমার স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, ‘একসঙ্গে দৃশ্য থাকলে তিনি আলাদা করে প্রস্তুতি নিতেন। তাঁর অভিজাত চেহারা, মার্জিত স্বভাব, ব্যক্তিত্ব... সবই যেন দ্যুতি হয়ে ছড়িয়ে পড়ত চারপাশে।’ এভাবেই একের পর এক ছবিতে অভিনয় দক্ষতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গেছেন অরুন্ধতী! যদিও এক ধরনের চরিত্রে আটকে থাকেননি কখনোই। কখনও তিনি ‘ঝিন্দের বন্দী’র রাজকন্যা আবার কখনও ‘জতুগৃহ’র সাধারণ ঘরণি। ‘ছেলে কার’, ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’ বা ‘শশীবাবুর সংসার’-এর মতো ছবিতে হাসির দৃশ্যেও সমানভাবে সাবলীল তিনি।
১৯৬২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ভগিনী নিবেদিতা’ চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর B.F.J.A. পুরস্কার পান অরুন্ধতী। তাঁর অন্যান্য ছবির মধ্যে ‘সতী’, ‘প্রশ্ন’, ‘গোধূলি’, ‘পঞ্চতপা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ অন্যতম। গান গাওয়ার মতো পবিত্র বিষয়কে পণ্য করতে চান না বলে গান গাওয়ার জন্য টাকা নিতেন না কখনও, গাইতে চাইতেন না সিনেমাতেও। তবুও ‘সুরের আগুন’ এবং ‘হারমোনিয়াম’ এই দুই ছবিতে গান গেয়েছিলেন তিনি। শুধু গান বা অভিনয়ই নয়, তিনি বেশ কয়েকটি ছবি পরিচালনাও করেন। বিমল করের ‘খড়কুটো’ উপন্যাস নিয়ে ১৯৬৭ সালে তৈরি করেন ‘ছুটি’। চিত্রনাট্য ও পরিচালনার পাশাপাশি ছবির সুরকারও ছিলেন তিনি নিজেই। সে বছরের সেরা ছবির পুরস্কার পায় সেটি। নিজের ছবি ছাড়া অন্যান্য কিছু ছবিতেও সুরারোপ করেছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে ‘মেঘ ও রৌদ্র’, ‘পদিপিসির বর্মি বাক্স’, ‘দীপার প্রেম’ ও ‘গোকুল’ নামে আরও চারটি ছবিতে পরিচালকের ভূমিকা পালন করেন। যে গল্পগুলি তিনি ছবির জন্য বেছে নিয়েছিলেন, সময়ের নিরিখে তা ছিল অনেকটাই এগিয়ে। ওই সময়ে দেশজুড়ে মহিলা পরিচালকদের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা, সেই প্রেক্ষিতে অরুন্ধতী দেবীর শিল্পকর্ম বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে। তাই আজ তাঁর জন্মশতবর্ষের সূচনালগ্নে তাঁর জীবন ও কাজের দিকে ফিরে দেখা এবং সার্বিক মূল্যায়নই হতে পারে অরুন্ধতী দেবীর প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধার্ঘ্য!

#birthdaytribute #ArundhatiDevi #IndianActress #অরুন্ধতীদেবী #জন্মশতবার্ষিকী

show more

Share/Embed