বগুড়া জেলার সেরা ৫ দর্শনীয় স্থান | Top 5 beautiful place in bogura
SHORT TALK SHORT TALK
13.7K subscribers
10,068 views
137

 Published On Aug 7, 2022

করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে সংস্কৃতি আর প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ বগুড়া জেলাকে বলা হয় উত্তর বঙ্গের প্রবেশদ্বার।

আজকের ভিডিওতে জানাবো
বগুড়া জেলার ৫ টি দর্শনীয় স্থানের তথ্য এবং সেই স্থানগুলোতে কিভাবে যাবেন।
তো চলুন শুরু করা যাক...

১। মহাস্থানগড়

মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে এটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় । বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কি.মি. উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷ বগুড়া শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা করে খুব সহজেই যেতে পারবেন মহাস্থানগড়।



২। গোকুল মেধ
গোকুল মেধ (Gokul Medh) বগুড়া সদরের গোকুল গ্রামে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। মহাস্থানগড় থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দক্ষিণ অবস্থিত এই স্থানটি জনসাধারনের কাছে বেহুলা-লক্ষ্মিন্দরের বাসর ঘর (Lakhindar Behular Basar Ghar) হিসাবেও পরিচিত। অনেকে আবার এটিকে লক্ষ্মিন্দরের মেধ নামেও আখ্যায়িত করেছেন। এন জি মজুমদার কর্তৃক ১৯৩৪-৩৬ সাল পর্যন্ত চালানো খননকার্যের ফলে এখানে একটি মন্দিরের ভিত্তি উন্মোচিত হয়। এই মন্দিরে গুপ্তযুগ অর্থাৎ ছয়-সাত শতকের কিছু পোড়ামাটির ফলক পাওয়া যায়। পরবর্তীতে সেন যুগে গোকুল মেধে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। মন্দির থেকে প্রাপ্ত একটি সোনার পাত ধারনা করা হয় এটি একটি শীব মন্দির ছিলো।

বেহুলার বাসরঘর বা গোকুল মেধ একটি অসাধারণ স্থাপনা। যা ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেবপাল কতৃক নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। মূল স্তূপের পশ্চিমার্ধে প্রচলিতে বাসরঘরের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। পূর্বার্ধে আছে ২৪ কোণ বিশিষ্ট একটি চৌবাচ্চার মতোন দেখতে একটি গোসলের স্থান।

কিভাবে যাবেন
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে গোকুল গ্রামের দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। বগুড়া (Bogra) শহর কিংবা মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড এসে সেখান থেকে সিএনজি বা অটো রিকশাযোগে বেহুলার বাসরঘর খ্যাত গোকুল মেধ যাওয়া যায়।

৩। ভাসু বিহার
ভাসু বিহার
বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড় থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে বিহার গ্রামে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ভাসু বিহার (Vasu Vihara) অবস্থিত। বগুড়ার স্থানীয় বাসিন্দারা নাগর নদীর পশ্চিমের এই জায়গাটিকে নরপতির ধাপ হিসেবে চিনেন। ভাসু বিহার থেকে গুপ্তযুগের দুইটি আয়তাকার বৌদ্ধ বিহার ও ক্রুশাকৃতি মন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে।
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ভাসু বিহারে প্রথম খনন কাজ করা হয়। খননের মাধ্যমে এখান থেকে দুইটি মধ্যম আকৃতির সংঘরাম, একটি মন্দিরের আংশিক অবকাঠামো এবং প্রায় ৮০০ টির মতো মুল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে ছোট মূর্তি, ব্রোঞ্জের বৌদ্ধ মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, সিলমোহর, মুল্যবান পাথরের গুটিকা, নকশাকৃত ইট, ফলক ও মাটির প্রদীপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভাসু বিহারকে বৌদ্ধ সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ হিসাবে মনে করা হয়। এখান থেকে আবিষ্কৃত বড় ও ছোট সংঘারামটির অবকাঠামো প্রায় একই রকম। এতে রয়েছে ২৬ টি কক্ষ, চারদিকে ঘোরানো বারান্দা ও প্রবেশ পথ। চীনের বিখ্যাত পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ এই স্থানকে “পো-শি-পো” বা “বিশ্ব বিহার” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এক সময় ভাসু বিহার বৌদ্ধদের গুরত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে পরিচিত ছিল।

৪। কালিতলা ও প্রেম যমুনার ঘাট
ভ্রমণ স্থান যদি হয় একই সঙ্গে নদীকেন্দ্রিক আবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, তাহলে তো কথাই নেই! বগুড়ার সারিয়াকান্দি এখানে আছে দুটি ঘাট। একটি কালিতলা ঘাট ও অপরটি প্রেম যমুনার ঘাট।যেখানে গেলে নদীর দেখা তো পাবেনই, উপরি পাওনা হিসেবে থাকছে খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশ। বগুড়া শহর থেকে ২২ কিলোমিটার পূর্বে সারিয়াকান্দিতে অবস্থিত ভ্রমণস্পট এই দুটি ঘাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে এখানে তৈরি করা হয়েছে যমুনা নদীর ভাঙ্গন রক্ষার্থে একটি বিশাল বাঁধ।এখানে ভ্রমনপ্রিয় মানুষদের ভ্রমণের জন্য নদীতে আছে ছই ছাড়া এবং ইঞ্জিনের নৌকা। ইচ্ছা করলেই ঘুরে আসা যায় ওই পাড়ের চর থেকে।
নদীতে ভ্রমণের সময় হঠাৎ করে পেয়ে যেতে পারেন ছোট বড় অনেক চর। এমন চর পেয়ে গেলে সেখানে নেমে গোসলও করতে পারেন মনের আনন্দে।
বগুড়া শহর থেকে সিএনজি অটোরিক্সায় সহজেই যেতে পাবেন প্রেম যমুনার ঘাও কালিতলা ঘাট।

৫। খেরুয়া মসজিদ

বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ (Kherua Mosque) বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা এলাকায় অবস্থিত। ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল খেরুয়া মসজিদটি নির্মাণ করেন। তবে মসজিদের নামকরণ নিয়ে সঠিক কোন ইতিহাস জানা যায়নি।প্রায় ৪৩০ বছর পুরনো সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর মিশেলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদটি চওড়া দেয়াল এবং মিনারের ভিতের কারণে আজো টিকে রয়েছে। চুন-সুরকির ব্যবহারে তৈরী ১.৮১ মিটার চওড়া লাল ইটের দেয়ালের উপর নির্মিত ছাদে অর্ধ গোলাকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। বাইরের দিক দিয়ে মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৭.২৭ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৪২ মিটার। মসজিদের পূর্ব দিকের দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর-দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে খিলানযুক্ত দরজা রয়েছে। আর পশ্চিম দেয়ালের আছে তিনটি কারুকার্যখচিত মেহরাব।
কিভাবে যাবেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে গ্রামীণ সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা মনোরম পরিবেশে খন্দকারটোলা গ্রামে এই মসজিদটির অবস্থান।

show more

Share/Embed