Published On May 16, 2021
পুষ্টিগুণ : তাল অতি পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ। সব ধরনের ফলে দেহের জন্য উপযোগী বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও মিনারেলস সমৃদ্ধ হলেও তালে এর বহির্ভূত কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদন রয়েছে। অন্য ফলের তুলনায় এ ফলে ক্যালসিয়াম, লৌহ, আঁশ ও ক্যালোরির উপস্থিতি অনেক বেশি। বয়স্কদের জন্য এ ফলের উৎস থেকে সহজেই হজমযোগ্য পর্যাপ্ত আঁশ প্রাপ্তিতে অতি গুরুত্ব বহন করে। আখের গুড়ের চেয়ে তালের গুড়ে প্রোটিন, ফ্যাট ও মিনারেলসের উপস্থিতি বেশি।
ঔষধিগুণ : তালের রস আমাশয় নিরাময়, মূত্রের প্রবাহ বৃদ্ধিকারক এবং পেটের পীড়া/প্রদাহ, কোষ্ঠকাঠিন্য নিরসনে সহায়ক। এ ফলের রস সেবনে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে, ক্লান্তি দূর করে, দেহে শক্তি জোগায় এবং অনিদ্রা দূর করে। তালের রস থেকে তৈরি মিসরি সর্দি-কাশি নিবারণে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মহৌষধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়া যকৃতের পীড়া ও পিত্তনাশক হিসেবে এ ফল অতি কার্যকর।
উপকারিতা : কাঁচা-পাকা তাল ও গাছের প্রতিটা অঙ্গ জনজীবনে অতি গুরুত্ব বহন করে। বয়স্ক গাছের (৫০ বছর ও তার ঊর্ধ্ব) কাণ্ডের টিম্বারভ্যালু খুব বেশি। গ্রাম-গঞ্জে টিনের বা সেমিপাকা বাড়ি তৈরিতে এ গাছের শক্ত দীর্ঘস্থায়ী কাঠের ব্যবহার জনপ্রিয়তা খুব বেশি। কাঁচাঘর তৈরিতে খড়ের বিকল্প হিসেবে দরিদ্র পরিবারবর্গ তালের পাতাকে অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
বর্ষায় প্লাবণে তালের কাণ্ড দিয়ে ডিঙি বানিয়ে অনেকে পানি পথ পারাপার হয়। জ্বালানি হিসেবেও তালের পাতা ও ডগা ব্যবহার করার প্রচলন গ্রামগঞ্জে বেশি। প্রাচীন কালে যখন কাগজের ব্যবহার প্রচলন ছিল না তখন লেখাপড়ার কাজে কাগজের বিকল্প হিসেবে তাল পাতা ব্যবহার করা হত। তাল পাতা দিয়ে নানা প্রকার হাত পাখা তৈরি করা হয়। গরমকালে এ পাখার ব্যবহার খুব বেশি। তাল পাতা দিয়ে রঙবেরঙের পাখা তৈরি ও বিপণনের মাধ্যমে বাড়তি উপার্জনের কাজে মূলত মহিলারা নিয়োজিত থাকে।
তালের ফুল ও কচি ফল থেকে সংগৃহীত রস অন্যতম সুস্বাদু মূল্যবান পানীয় হিসেবে ব্যবহার অতি জনপ্রিয়। তালের রস থেকে গুড় তৈরি করা হয়। এ গুড়ের বাজার মূল্য অনেক বেশি। পুরুষ-স্ত্রী উভয় প্রকার গাছ থেকেই তালের রস পাওয়া যায়। মৌসুমে একটা তাল গাছ থেকে দৈনিক ১০-১৫ লিটার রস পাওয়া যায়।
কচি তালের ভেতরের আহার্য্য অংশ অতি সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। কচি ফলের বাজার মূল্যও অনেক বেশি। এপ্রিল-মে মাসের গরমে তৃষ্ণা নিবারণে ও বিচিত্র স্বাদ আহরণে কচি তালের কদর বেশি। কচি তাল সংগ্রহ ও তা বিপণন কাজে হাজার হাজার মানুষ মৌসুমে নিয়োজিত হয়ে থাকে। পাকা তালের ঘন রস বিভিন্ন উপাদেয় সুস্বাদু খাবার তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। তালের রস দিয়ে তৈরি হরেক রকমের পিঠা, পায়েশ, হালুয়ার স্বাদই আলাদা। তালের আঁটিকে ছাই মিশ্রিত মাটির নিচে ৫-৭ সপ্তাহ সংরক্ষণ করা হলে তা থেকে লম্বা মোটা শিকড় গজায়। এ অবস্থায় আঁটির ভেতরে নরম শাঁস তৈরি হয়। শিশু, কিশোর ও বয়স্ক সবার কাছে এ সুস্বাদু আঁশ অতি জনপ্রিয়।
বৃহত্তর ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও রাজশাহী জেলায় এ ফলের চাষ তুলনায় অনেক বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে অসময়ে প্রচুর বৃষ্টি ও বজ্রপাতের প্রতিকূল প্রভাব অহরহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের আধিক্য অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে হাওর এলাকায় তালসহ অন্য বয়স্ক বড় গাছের (বট, পেকুড়, তেঁতুল) অনুপস্থিতির কারণে তদাঞ্চলে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার তুলনায় অনেক বেশি। এ অবস্থার উন্নয়নে সারা দেশে তাল গাছ সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া সবার কর্তব্য।