হৃদরোগীদের রমজান | ডাঃ ইকবাল মাহমুদ
Parkview Hospital Chittagong Parkview Hospital Chittagong
96K subscribers
466 views
16

 Published On Apr 3, 2022

রোযা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ।আরবী চন্দ্রবর্ষের নবম মাস বিশ্বব্যাপী মুসলমানগণ সাওম বা রোযা পালন করে থাকেন।প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলিম নরনারীর জন্য রোযা কে ফরজ করা হয়েছে।তবে অসুস্থতাসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইসলাম রোযা রাখা থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে।
আজকে আমরা জানবো হার্টের রোগীরা রোযা রাখতে পারবেন কিনা?
রাখলে কি কি নিয়ম মেনে চলবেন?
নিয়মতি খেয়ে যাওয়া হার্টের ঔষধগুলো কিভাবে খাবেন?
রমজানে কি ব্যায়াম করবে? করলে কখন?
রোযা রাখলেও কখন ভাঙ্গতে হবে?
★★★প্রথম কথা হার্টের রোগীরা রোযা রাখতে পারবেন কিনা?
যদি হার্টের রোগী জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও ঔষধের মাধ্যমে কোন উপসর্গ ছাড়া সুস্থ্য থাকেন।কোন বুকে ব্যথা,শ্বাস কস্ট, বুক ধড়পড়, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ না থাকে তাহলে তারা কিছু নিয়ম কানুন মেনে রোযা রাখতে পারবেন।
হার্টের সমস্যা আছে কিন্তু বর্তমানে কোন উপসর্গ নাই এবং হার্টের ফাংশন ৫০%(EF-50%)এর উপরে তারা রোযার রাখতে পারেন।
★★★কোন কোন রোগী তাহলে না রাখলে ভালো?
সম্প্রতি হার্ট এটাক হয়েছে এমন রোগী
-যেসব হার্ট এটাকের রোগী সঠিক জীবনযাত্রা ও ঔষধ সেবনের পরও বিশ্রামে থাকা অবস্থায় বা অল্প পরিশ্রমেই বুকে ব্যথা অনুভব করেন।
যে সব হার্ট ফেইলরের রোগী সঠিক জীবনযাত্রা ও ঔষধ সেবনের পরও বিশ্রাম বা অল্প পরিশ্রমেই শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন।
অনিয়ন্ত্রিত হাইপ্রেসার(হাইপারটেনশন) বা হাইপ্রেসারের কারণে বুকে ব্যথা/কিডনী/ব্রেন বা চোখে সমস্যা হচ্ছে এমন রোগী
৩ মাসের মধ্যে হার্টে রিং বা বাইপাস সার্জারী হয়েছে।
তবে রিং বা বাইপাসের ১ বছর পর যদি কোন সমস্যা না থাকে তাহলে রোযা রাখা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
৩মাস থেকে ১বছর সময়টা চিকিৎসকের পরামর্শ ও রোগীর ফিটনেসের উপর নির্ভরশীল।
-জন্মগত হার্টের কিছু ত্রুটি, যেগুলোতে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে শ্বাসকষ্ট বা হাত পায়ের আঙ্গুল নীল হয়ে যায়।
★★ঔষধ কিভাবে এডজাস্ট করবেন?
সাধারণত রমজানে দুইবেলা খাওয়ার ঔষধগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি।
-একই ঔষধের মধ্যে যেগুলো দীর্ঘক্ষণ কাজ করে সেগুলো ব্যবহার করা উচিত।
-সকালের ঔষধগুলো ইফতারে,রাতে ঔষধগুলো সেহরীতে নেয়া যায়।
তবে ডাইইউরেটিক ( Lasix,Fusid,Frulac,Spirocard,Dytor..etv)জাতীয় ঔষধগুলো সন্ধ্যায় খেতে হবে।এগুলো সেহরীতে খেলে সারাদিন প্রসাবের সাথে শরীরের পানি সব বের হয়ে পানিশূন্যতা, প্রেসার কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
-প্রেসারের ঔষধের ক্ষেত্রেও যেগুলো ডাইইউরেটিক জাতীয় সেগুলো সন্ধ্যায় খেতে হবে।
কেউ যদি শুধু একটা প্রেসারের ঔষধ খান সেটাও ইফতার বা সন্ধ্যায় খেলে ভালো।
হার্টের রোগীদের কমন ঔষধগুলোর মধ্যে একটি হলো এন্টিপ্লাটিলেট(Ecisprin,Lopirel,Clopid AS,Odrel,Asclop...etc)বা রক্ত জমাট না বাঁধার ঔষধ।
এগুলো সাধারণত আমরা দুপুরে খাবার পরে দিয়ে থাকি।রমজানে এগুলো ইফতার বা সেহরী যে কোন সময় খাওয়া যেতে পারে।তবে ইফতারের পরে খেলে ভালো।
★★★খাবার দাবার নিয়ে কিছু কথাঃ
-যেহেতু সারাদিন না খেয়ে থাকা হয়,তাই ইফতারের হার্টের রোগীরা হঠাৎ করে অতিরিক্ত পানি জাতীয় খাবার বা শরবত খেলে সেটা শরীর এডজাস্ট করতে ঝামেলা হতে পারে।
তাই #অতিরিক্ত শরবত না খাওয়াই ভালো।
আমরা যে খাবারগুলো ইফতারী তে খাই তার সবই তেলে মচমচে ভাঁজা।এগুলো সব ট্রান্সফ্যাট বা খারাপ চর্বিতে ভর্তি থাকে।যেগুলো হার্টের রোগীদের জন্য খুবই বিপদজনক।তাই হার্টে রোগীরা ইফতারে এসব ভাজাপোড়া খাবেন না।
-যাদের হাইপ্রেসার আছে তারা শরবতে অতিরিক্ত লবণের দিকে লক্ষ রাখবেন।
একসাথে নাক পর্যন্ত না খেয়ে ইফতারে অল্প তারপর নামাজ কালাম,একটু হাঁটাহাঁটির পর আবার অল্প খাওয়াটা উত্তম।

#হৃদরোগ #রমজান
হার্টের রোগী বা ডায়াবেটিসের রোগীদেরকে আমরা ব্যায়াম করতে বলি।রমজানে ব্যায়ামের উপযুক্ত সময় হচ্ছে সন্ধ্যায়।সকাল বা বিকালে ব্যায়াম করতে গেলে পানিশূন্যতা,দুর্বলতা,হার্টের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
যেহেতু এবার রমজান গরমের সময়ে,তাই হার্টের রোগীরা অতিরিক্ত পরিশ্রম,অতিরিক্ত ঘাম ঝরানো থেকে দূরে থাকবেন।পানিশূন্যতা হচ্ছে কিনা খেয়ার রাখতে হবে।
★★★রোযা কখন ভাঙ্গব?
মুসলিম পরিবারে জন্ম নেয়া শিশুরা ছোটবেলা থেকেই রোযার প্রতি আলাদা সংবেদনশীল। তাই বড় হয়েও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লেও রোযা ভাঙতে চান না।অনেকেই দেখা যায় প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর কখনোই রোযা ভাঙ্গেন নি।তারা যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোযা চালিয়ে নিতে চান।কিন্তু অসুস্থতার ক্ষেত্রে ইসলামই রোযার ভাঙ্গার বা না রাখার বিধান রেখেছে।
হার্টের রোগীদের যদি প্রচন্ড বুক ব্যথা,শ্বাস কষ্ট,অতিরিক্ত পালপিটিশন, হার্ট বিটের প্রচন্ড ইরেগুলারিটি বা পরীক্ষা করে হার্ট এটাক পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে রোযা ভেঙ্গে ফেলাই উত্তম।
তবে হার্টের রোগী যদি রোযা রাখতে চান,তাদের জন্য ভালো হচ্ছে তারা রমজানের আগেই শাবান মাসে কিছু নফল রোযা রেখে ট্রায়াল দেয়া।যেটা হাদীসেও বলা হয়েছে শাবান থেকে রমজানের প্রস্তুতি নিতে।

show more

Share/Embed